শনিবার, ০৬ মার্চ ২০২১, ১০:১৪ অপরাহ্ন
শীতে কাঁপছে গোটা দেশ। কনকনে ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এই তীব্র শীত অনেকের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের অভাবী ও গরিব মানুষ। শিশু ও বয়স্কদের দুর্ভোগও বর্ণনাতীত।
জীবনযাত্রা কষ্টকর হয়ে পড়েছে দিনমজুর, ভ্যানচালক, ইজিবাইক চালক, পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিকসহ সাধারণ কর্মজীবী এবং ছিন্নমূল মানুষের। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কাজে যোগ দিতে দুর্ভোগে পড়ছেন খেটে খাওয়া মানুষ। কাজে যেতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে সমস্যায় রয়েছেন তারা। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে চরের হতদরিদ্রদের কষ্ট হচ্ছে বেশি। সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছে শিশু, নারী, প্রতিবন্ধী ও বয়স্করা।
আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের সাথী ভাই চ্যানেলের সাথী ভাই ফাউন্ডেশন এর ব্যবস্থাপনায় কিছু অসহায় মানুষের খেদমত করার সুযোগ হয়েছিলো। আল্লাহ তায়া’লা আমাদের খেদমতকে কবুল করে নেন।
আহ! নিজের চোখে দেখলাম ১ টি কম্বল হাতে পেয়ে কিভাবে খুশিতে কেদে ফেলছে মানুষ গুলো।
দিনাজপুর জেলার শেষ প্রান্তে এক জায়গায় যখন সাথী ভাই ফাউন্ডেশন এর শীতবস্ত্র পৌছলো। তো আগে থেকেই সেখানকার ওলামায়ে কেরামদের বলা ছিল আপনারা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ খবর নিয়ে (আসলেই যাদের দরকার) তাদের একটি তালিকা প্রস্তুত করেন। আমরা এসে ইনশাআল্লাহ তাদের কাছে শীতের পোশাক বা কম্বল পৌঁছে দিব। সেখানের মাদ্রাসার মুহতামিম সাহেব খুঁজে খুঁজে প্রায় ৫০-৬০ জন বিধবা মহিলা সহ অনেক অসহায় মানুষের তালিকা প্রস্তুত করেছেন। উনি বললেন, এইতো কয়েকদিন আগেই এক বিধবা অসহায় বৃদ্ধা মায়ের সাথে আমার দেখা হলো। সে বলল হুজুর পুরা শীত কেটে গেল শীত বস্ত্র ছাড়া। শীত নিবারনের কোন বস্ত্র কি আমাদের কাছে আসবেনা? আমি তাকে বলেছিলাম ইনশাআল্লাহ অবশ্যই আসবে। আজকে সাথী ভাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আসা শীতবস্ত্র গুলো দেখে মনে হচ্ছে, এটা আল্লাহতালার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য আসা শীতবস্ত্র। আল্লাহ তাআলা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তাদের মাধ্যমে। কথা গুলো বলতে বলতে উনি কাঁদে দিলেন।
বিশেষ ভাবে শুকরিয়া আদায় করি, আমার খুবেই কাছের বন্ধু মাওলানা আব্দুল আলীম সাহেবের। (মোহতামীম, মারকাযু শাইখিল ইসলাম আল মাদানী ঢাকা) উনি উনার মাদ্রাসার শত ব্যস্ততার ভিতর কম্বল কিনা থেকে শুরু করে তাদের কাছ পর্যন্ত পৌঁছাতে আমাদের খুব সহায়তা করেছেন। আমাদের সকলের উচিত যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসার।
এই হাড়কাঁপানো শীতে যে বিপুল জনগোষ্ঠী বর্ণনাতীত দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করছে, তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দ্বীনি দায়িত্ব। এ বিষয়ে হজরত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব একটি বিপদ দূর করবে, আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন তার সব বিপদ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবী মানুষকে সচ্ছল করে দেবে, আল্লাহতায়ালা তাকে ইহকাল ও পরকালে সচ্ছল করে দেবেন।’ -সহিহ মুসলিম
বদর যুদ্ধের বন্দী হজরত আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুকে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পোশাকের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট মুদার গোত্র হতে গলায় চামড়ার আবা পরিহিত বস্ত্রহীন কিছু লোক আগমন করল। তাদের করুণ অবস্থা দেখে তার চেহারা বিষণ্ন হয়ে যায়। তিনি নামাজ শেষে সাহাবাদের লক্ষ্য করে দান-সদকার জন্য উৎসাহমূলক খুতবা প্রদান করেন। ফলে সাহাবারা এত অধিক পরিমাণ দান করলেন যে, খাদ্য ও পোশাকের দু’টি স্তুপ হয়ে যায়। এ দৃশ্য দেখে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত আনন্দিত হলেন, তার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
অভাবীকে বস্ত্র দানের গুরুত্ব প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতের পোশাক দান করবেন। ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করলে আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল দান করবেন। কোনো তৃষ্ণার্ত মুসলমানকে পানি পান করালে মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতের সিলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানীয় পান করাবেন।’ -সুনানে আবু দাউদ
শীতে অভাবী মানুষের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে শীতবস্ত্রের। করোনার কালো থাবা আর অভাবে কারণে অনেকের পক্ষে আলাদাভাবে শীতের কাপড় কেনা দুঃসাধ্য। আল্লাহ তায়া’লা আমাদের সবাইকে অসহায় মানুষের খেদমতের সুযোগ করে দেন।
Leave a Reply